পেট
জিকোর যখন যেটা চলে তখন সেটা চলতেই থাকে। হয়তো যেকোনো বাচ্চার ক্ষেত্রেই তাই । আমরাও হয়তো তাই ছিলাম। কিন্তু আমাদের সেইসব দিনগুলোর দাপাদাপি ভাগ হয়ে যেত দাদু ঠাকুমা কাকা পিসি পাড়া-প্রতিবেশী সবার মধ্যে – বাবা মার উপর চাপ পড়তো কম । একেতে আমাদের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি তার উপরে এই লকডাউন, সোনায় সোহাগা আর কি !
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে homophones অর্থাৎ একই ধ্বনি যুক্ত শব্দের খেলা । ক্লাসে শেখানো শব্দযুগলের সাথে নতুন নতুন শব্দ । Know/No, Their/There, Buy/By, Sea/See …….. এই রকম আর কি । মাঝে মাঝে বাংলা হিন্দি ইংরেজি সব মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে। যেমন Bell আর বেল । ইংরেজির Bell নাড়িলে ঢং ঢং কিংবা কিন কিন করে বেজে ওঠে। বাংলার বেল এমনি বাজে না ,মাথায় পড়লে (বিশেষ করে নেড়ার মাথায়) শত প্রকার বাজনা একসাথে বেজে ওঠে – যাকে বলে Concert । Cool/ কুল, Lie/লাই …. এরকম আরো অনেক আছে যা নিয়ে পুত্রের সংশয়বিহীন মিশ্রন, আর আর আমাদের জট ছাড়ানোর অবিরাম প্রচেষ্টা।
লকডাউন এর কল্যাণে আমাদের প্রত্যেকের বাড়ি ব্যবস্থাপনা মোটামুটি এক রকম। দুই তিন চার ( যার যার যেমন আছে) কামরার মধ্যে সবাই ।এমন ব্যবস্থা না আমরা আগে দেখেছি, না আমাদের বাচ্চারা। জিকোর পক্ষে ব্যাপারটা একটু বেশি অন্যরকম কারণ প্রাক- লকডাউন -এ উইকেন্ড ছাড়া বাবা মাকে একসাথে দেখতে পেত না। আমার বউয়ের ডিউটির সময় normal daytime, কিন্তু আমার বিকেল থেকে রাত্রি প্রথম প্রহর। অতএব ‘তোমার হলো শুরু আমার হল সারা ‘ এই টাইপ এ চলছিল সংসার । বিশেষ করে রাতে শোবার সময়। ওটা সব বাচ্চার মতো জিকোরও বড় আহ্লাদের সময়।এখন প্রতিদিন রাতে এই যে ওর দুপাশে বাবা-মা শুয়ে আছে এতে বিশেষ উত্তেজিত ও।
কয়েকদিন আগে এমনি এক আনন্দের মুহূর্তে আমাদের দুজনকে গালে চুমু খেয়ে বলে উঠলো – ‘আমার পেট বাবা’, ‘আমার পেট মা’ । ওর মা সরল মনে এই পেট কে বাংলা রূপে গ্রহণ করলো। বললো – হ্যাঁ বাড়ি বসে বসে যেমন পেট-সর্বস্ব হয়ে উঠছি, তাতে পেট বাবা পেট মা – ই বটে।
আমি কিন্তু বুঝলাম প্রকৃত অর্থ । ওটা ইংরেজির pet । homophones লিস্ট এর নতুন সংযোজন । আমি নিজ দায়িত্বে ওকে বুঝিয়েছি বাংলার পেট আর ইংরেজির pet র অর্থ । লকডাউন এর কল্যাণে গৃহবন্দী বাবা-মা এখন প্রকৃত অর্থেই Pet অর্থাৎ গৃহপালিত ।